Wednesday, October 22, 2008

ভয়াবহ ঘুর্নিঝড় সিডর

দিনটি ছিল বৃষ্পতিবার। তারিখটি ছিল ১৫ই নভোম্বর ২০০৭ সাল। তার আগের দিন থেকেই আমাদের কানে ভেসে এসেছে ভয়াবহ প্রলয়ংকারী ঘুর্নীঝড় সিডরের সংবাদ। প্রথমদিন আবহাওয়া অধিদপ্তর আমাদের ৪নং সর্তক সংকেত দিয়েছিল এবং সবাইকে কাছাকাছি আশ্রয় কেন্দ্র আশ্রয় নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রায় দু’ঘন্টা পর ১০নং মহাবিপদ সতর্ক সংকেত দিয়েছিল। অনেকেই এই সর্তক সংকেত শুনে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল। যাদের ভাগ্যে ছিল র্দুভাগ্যের সাথে গড়া, তারাই রয়ে গেলো তাদের বসত বাড়িতে। এক সময় বৃহষ্পতিবার রাতে শুরু হল তুমুল ঘুর্নীঝড় সিডর। যার আঘাত লন্ডভন্ড হয়ে গেলো গোটা বাংলাদেশ। ঝড়ের আঘাতে বাংলাদেশের এমন কিছু জেলা আছে যা শুধুমাত্র তুলার মত উড়তে থাকে। এমন কিছু গ্রাম আছে যার কোন অস্তিত্ত্ব নেই। এমন কোন লোক নোই যার স্বজন হারাইনি। কিছু কিছু পরিবার আছে, যে পরিবারের একজনকে টিকিয়ে রেখেছে কান্নার জন্যে। যার ঘর-বাড়ি, ফসল, আত্মীয়-স্বজন সব চলে গেছে। বাংলাদেশে ৬৪টি জেলার মধ্যে তা প্রায় ২০/২৫ টি জেলার উপর দিয়ে ভয়াবহ সিডর আঘাত হেনেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে ১৬টি জেলায়। যার কোন চিহ্ন নেই। কিছু কিছু জেলাগুলো এমন হয়েছে। যা দেখলে কখনোই বুঝা যাবে না যে এখানে মানুষের কোন বসবাস ছিল। দু-একজন যা চোখে পড়ে দেখা যায় তাদের কান্নার ঢল। তাদের খুদার যন্ত্রনা ও স্বজন হারা আর্তনাদ বাংলার আকাশ ছেয়ে গেছে। একটা মানুষের বেচেঁ থাকতে যা কিছু প্রয়োজন, ঘর-বাড়ি, গবাদি পশু, খাদ্য বস্ত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা সবকিছু নিয়ে গেছে সিডর। ঘুর্নীঝড় সিডরের আঘাতে কত লোক প্রান হারিয়েছে তা এখনো সঠিক বলা যাবে না। কারন সকল জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন। কোথাও সঠিক মোবাইল টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। বিদ্যুৎতের খুঁটি উপড়ে গেছে, বিছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুৎ লাইন। এরই মধ্যে টুকিটাকি সংবাদ জানা গেছে তিনহাজারের বেশি মানুষের প্রান হারিয়েছে। বিধস্ত হয়েছে হাজারো ঘর বাড়ি, যারা প্রান হারিয়েছে হয়ত তারা বেঁচে গেছে। কিন্তু যারা প্রানে বেঁচে আছে তাদের অবস্থা এত খারাপ যে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না, তাদের বাঁচার কোন পরিস্থিই নেই, নেই কোন ঘর বাড়ি, নেই খাদ্য, বস্ত্র, নেই কোন মুখে একমুঠে ভাত তুলে দেওয়ার মত এজন স্বজন। আছে শুধু চোখের জল। অনেকের সেই জলটুকু শুকিয়ে গেছে। এমন একজন বৃদ্ধ বেঁচে আছেন যার বংশে কেই নেই। শুধুমাত্র উনি বেঁচে আছেন আর আছে উনার বুক ফাটা কান্না হাহাকার আর্তনাদ। ভয়াবহ ঘৃর্নীঝড় সিডর কেড়ে নিয়ে গেছে মানুষের সবকিছু। আর দিয়ে গেছে বাংলাদেশকে না খাওয়ার যন্ত্রনা স্বজন হারা আর্তনাদ, ভিটেমাটিটুকু হারানোর হাহাকার। ফসল নষ্ট হয়েছে তা প্রায় ৮ লাখ ৬৩ হাজার ৭শ। দারিদ্র এই বাংলাদেশ কতটুকু সাহায্য করতে পারবে অসহায় এই মানুষদের সৃষ্টিকর্তা কতটুকু সময়ের মধ্যে ভেঙ্গ চুরমার করে দিল হারিয়ে যাওয়া সাজানো সংসার। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন অসহায়। তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসুন। তবেই হবে বন্ধুত্ত্বের পরিচয়।

No comments: