Saturday, October 18, 2008

নির্যাতিত অবলা

প্রথম প্রকাশ


অনেক দিনের একটা ইচ্ছা ছিল নার্সিং র্কোস শেখারচ্ছা পূরন ও হয়েছেআমি ছিলাম নারী জীবন প্রজেক্টের একজন নিয়মিত ছাত্রী এবং বাংলা ব্লগের একজন নিয়মিত লেখিকাসব ছেড়ে চলে এলাম নার্সিং র্কোস শিখতে কুমিল্লার ব্রাম্মনবাড়িয়ায়, একটা অপরিচিত যায়গাপ্রথম প্রথম সমস্যা হচ্ছিএখন একটু দ্বিধাবোধ কেটে গেছেতো যাই হোকআমি যেখানে থাকি এটা একটা হাসপাতালনতুন হাসপাতাল বলে রোগীর সংখ্যা কম দিনে ১০-১২টা রুগী সেআলাদা কোন র্নাস নেইআমরা এখানে শিখি এবং পাশাপাশি র্নাসিং এর দায়িত্ব পালন করিবিভিন্ন ধরনের রুগী আসেতাদে সেবা করিভালই লাগে

কিছু দিন আগে সকালে একটা রুগী এসেছেদৌড়ে গেলাম রুগীটাকে দেখতে প্রয়োজন মত সেবা দেয়াও শুরু করলামরোগীটি ছিল মহিলাপ্রথমবস্থায় বুঝতে পারিনি যে রোগীটির কি হয়েছেকিন্তু রে জানতে পারলাম মহিলাটি স্বামী ও শ্বাশুড়ীর নির্যাতনের স্বীকারতাকে এত পরিমানে মারধর করেছে যার ফলে তার জীবন নিয়ে টানাটানিমহিলাটিকে যথেষ্ট পরিমানে চেষ্টা করলাম সুস্থ রে তুলতেকিন্তু পারলাম না আমাদে ডাক্তার তাকে শহরের বড় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেনকিন্তু পাষন্ড স্বামী তা মেনে নিলো নাবলল, আপনারা যা পারেন তাই করেননা পারলে বলেন আমি বাড়ি নিয়ে যাই ডাক্তার বলল, পনার স্ত্রীর অবস্থা খুব খারাপএই মুহুর্তে বাড়ি নিয়ে গেলে কিছু একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে লোকটি বলল,”ঘটুক সমস্যা নাইস্যার কিছু না বলে আরেকটা রুগী দেখতে চলে গেল আমি ও আমার সাথে যারা আছে আমরা রুগীটির কাছে থাকলামআমি রোগীটিকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার এঅবস্থা কিভাবে হয়েছেরোগীটি কথা বলতে পারছে না, শুধু চোখের পানি ফেলছে আর বলছে আমাকে খুব মেরেছেতার মুখ থেকে কোন কথা বেড়োচ্ছে না অবলা নির্যাতিত নারীদের জীবনে কোন স্বাধীনতা নেই আছে শুধু একটি স্বাধীনতা আর তা হল চোখের জল ফেলাআর কিছু বলতে হল না তাকে আমি বুঝতে পারলাম ইনি একজন স্বামীর নির্যাতনের স্বীকারসান্তনা দেয়ার ভাষা ছিল নাতবু ও যেহেতু সেবিকার পোষাক পড়েছি সেহেতু কিছু না কিছু সান্তনা দিতে তো হবেই তাই সান্তনা দিলামজরুরি বিভাগে রোগীটির স্যালাইন চলছেরুম থেকে হাসপাতালের বারান্দায় এসে দেখি মহিলার সেই পাষন্ড স্বামী দাঁড়িয়ে আছেতাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনার স্ত্রীর সমস্যাটা কি? লোকটি বলল, কি আর সমস্যা, রে পেত্নিতে পাইছে, অয় সারা জীবন আমারে জালাইছেখালি খালি কোন কারণ ছাড়াই অজ্ঞান হইয়া যায় তখন আমার খুব রাগ হচ্ছিআমি তখন নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনিবলে ফেললাম এটা কোন কথা? আপনি এখনো পেত্নিতে বিশ্বাস করেননিজেকে সামলে নিয়ে বললাম , এধরনের বাজে কথা রোগীর সামনে বলা ঠিক নাআপনি তার স্বামী, আপনি যদি তাকে সান্তনা না দেন তবে কে দেবে?” আপনি সবসময় তার পাশে থাকবেন এবং স্যার যেটা বলল সেটা করেন, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া সদ হাসপাতালে নিয়ে যানএই বলে আমি চলে এলাম রিসিপসনের রুমে ঐ যে আগেই বলেছি এটা নতুন হাসপাতাল তাই রিসিপসনের জন্য আলাদা কোন লোক নেইঅবশ্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেযাই হোক আমি রিসিপসনে গিয়ে বসলামওখানে আরো ও মেয়েরা ছিলগিয়ে দেখি মধ্য বয়স্ক একজন পুরুষ ও মহিলা এবং ছোট একটা বাচ্চা ওখানে বসে আছেতারপর জানতে পারলাম যে তারা অসুস্থ মহিলার বাবা এবং মাতারা উভয়েই কাদঁছে আমি ও আমার রুমমেট তাকে সান্তনা দিলাম এবং বললাম, পনার মেয়েকে কি সবসময় এরকম অত্যাচার করে? তিনি বললেন হ সব সময়ই করে, বিয়ার পরেততেই এমন করে তখন আমার রুমমেট জোরে চেঁচিয়ে বলল, আপনারা এর পদক্ষেপ নেন না কেন?” তারা বলল, শুধু মাত্র এই নাতিটার মুখের দিকে তাকাইয়া সহ্য কইরা আছি কাথাটা শুনে একবার চ্ছে হল আরও কিছু বলি কিন্তু চ্ছে থাকলেও উপায় ছিল নাএর মধ্যেই পাষন্ড সেই লোকটি এসে হয়ত বা আমাদে সব কথা শুনে ফেলেছিলতাই তার শ্বাশুড়ীকে ধমক দিয়ে বলল, এই বেটি এহেনে কি? মেয়ে জামাইয়ের কথায় মহিলাটি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি ওখান থেকে ওঠে চলে গেলোলোকটি আরও অনেক কটু কথা বলল তার শ্বশুর এবং শ্বাশুড়ীকে আমাদে বলার কিছু ছিল নাশুধু পাষন্ড লোকের পাষন্ডতম ব্যবহারগুলো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখলামঐ এলাকার কিছু মেয়ে আছে আমাদেসাথে নার্সিং শেখেওরা বলল লোকটি নাকি খুব খারাপবড় ছোট মানে না প্রচন্ড বেয়াদপ

৩০-মিনিট সময় যেতে না যেতেই দেখলাম মহিলাটিকে রিক্সায় তুলছে দেখে খুশি হলাম ভাবলাম সদ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেকিন্তু ভাগ্য যখন খারাপ হয় তখন ভাগ্যকে ভাল করার কোন রাস্তা থাকে নাকিছুক্ষণ পর জানলাম ওনাকে সদ হাসপাতালে না নিয়ে বাড়িতে নিয়ে গেছেবুঝতে পারলাম মহিলাটির ভাগ্যে শুধু নির্যাতন জুটলো কিন্তু সু-চিকিৎসা জুটলো না একেই কি বলে নারীর অধিকার? এ কেমন অধিকার যার ফলাফল শুধু নির্যাতন অন্যায়, অত্যাচার, অবজ্ঞা আর অবহেলারবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কথা আমার মনে পড়ে গেল-

অবহেলিত অসহায় নারীদে
বিচারের বানি নিরবে নিভৃতে কাঁদে

একথাটা কি আজ সত্যি হয়ে গেল? নে হচ্ছে তাইএকটা মেয়ে বাবার আদ মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা ভুলতে চায় শুধু তার স্বামীর ভালোবাসা পাবার জন্যঅথচ সেই ভালোবাসাই যদি না পায় তবে একটা মেয়ের জীবনে আর কি থাকতে পারে? বাবা, মায়ের ভালোবাসার আঁচল ছেড়ে শ্বশুর, শ্বাশুড়ীর আঁচলে আশ্রয় নেয় চ সেই শ্বশুর শ্বাশুড়ী যদি তাদে ত্রু হয়ে দাঁড়ায়, তবে সেই অসহায় মেয়েটি কোথায় যাবে? র্নিযাতিত অসহায় নারীর আর্তনাদ চিৎকার আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে,গাছের পাত ঝড়ে পড়ছে তবুও পাষন্ড স্বামীর মন গলে নাজানিনা মহিলাটি বেঁচে আছে কি না? নাকি পাষন্ডের নির্যাতন সহ্য করছেসরকার নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেতারপরেও নারী নির্যাতন বেড়ে চলেছে দিনের পর দিনঅবলা নারীদে বর্তমান জীবনটা ধাপে ধাপে চলছেপ্রথম ধাপ বাবা মায়ের সংসারে দুঃখে কষ্টে মানুষ হওয়াতার পর বিয়েশ্বশুর বাড়ি যাওয়া শ্বাশুড়ীর ও স্বামীর নির্যাতনের স্বীকার হওয়াঅবশেষে ফলাফল মৃত্যুএটাই কি বর্তমান নারীদের পরিচয়? এর কি কোন প্রতিকার নেই? আমরা নারী এটাই কি আমাদের অপরাধ? না তা কিছুতেই হতে পারে না আমাদের অগ্রধিকার চাইআমরা সুন্দর ভাবে বাচঁতে চাইআমরা ভালোবাসা দিতে চাইভালোবাসা পেতে চাইআমরা স্বাধীনতা চাই এটা আমাদে চাওয়া, এটা আমাদে আকাঙ্খা

No comments: