Wednesday, October 22, 2008
বাঙালী
হয়রানি
অবশ্য মনে মনে ভালই লাগছিল। একপাশে ঘর-বাড়ি,গাছ-পালা এক কথায় গ্রাম, আর এক পাশে ধূ ধূ করা মাঠ। আর সেই মাঠে হলুদ কার্পেট বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। হলুদ সরিষার ফুলে মাঠ ভরেগেছে। একটানা চার ঘন্টা পথ ধরে ধীরে ধীরে এগোতে লাগলাম আরিচার দিকে। এক সময় জ্যাম ছাড়ল। আরিচায় পৌঁছে গেলাম। লঞ্চ ঘাঁটে পৌঁছে দেখি শুধু মানুষ আর মানুষ। ভাইয়াকে বললাম “ভাইয়া কিভাবে যাব? এ দেখি হাঁটা পর্যন্ত অসম্ভব। তারপরেও দেখি লঞ্চের অভাব। যে পরিমান লোক, তার উপযুক্ত পর্যাপ্ত পরিমান লঞ্চ নেই। নেই লঞ্চ, নেই নদী পথের অন্য কোন যানবাহন, নেই উপযুক্ত নিয়ম শৃঙ্খলা। আছে শুধু মানুষ আর মানুষ। ভাইয়া বলল “ট্রলারের ব্যবস্থা করতে হবে। নয়ত লঞ্চে ঢুকলে মানুষের চাপেই মারা যাব।”
কথাটা প্রায় ৯০% সত্যি হচ্ছিলো। অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। যাই হোক বললাম যে টার্মিনালে ঢুকবোনা। কিন্তু কিভাবে যে র্টামিনালে ঢুকলাম তা আমরা নিজেরা ও জানি না। মামা বলল, “ঢুকে যখন পড়েছি বেরোনো যাবে না”। একথা বলতে না বলতেই পিছন থেকে ঢেউ এর মত একটা ধাক্কা এল। চলে গেলাম অনেক দূরে। অনেকক্ষণ পর একটা লঞ্চ আসল। চোখের পলকে লঞ্চটা চলেও গেল। তার মানে লঞ্চ আসতে দেরি যেতে দেরি নাই। হঠাৎ চিৎকার শুনলাম। হালকা করে যা দেখলাম, তাতে বুঝলাম একজন মহিলা ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেছে। তার পরনে ছিল শাড়ি। মধ্যবয়স্ক সেই মহিলা মানুষের পায়ের নিচে আহাজারী করছে কিন্তু উঠতে পারছে না। সেই সময়টার এমন অবস্থা ছিল যে, মানুষ তাকে হাত ধরে উঠাবে কি? তার গায়ের উপর দিয়ে সবাই লঞ্চে উঠছে। অনেকক্ষণ পর পর একটি লঞ্চ আসছে। আর মানুষ যে কিভাবে উঠছে তা শুধুমাএ স্বচোক্ষে দেখানো ছাড়া লিখে বোঝানো যাবে না। আমার হাতে ছিল দুটি ব্যাগ, মামার হাতে ছিল একটি ব্যাগ, ভাইয়ার হাতেও একটি ব্যাগ। অবশ্য তাদের ব্যাগ গুলো ছিল বড়। আর আমার হাতের ব্যাগ ছিল ছোট। হঠাৎ একটা লঞ্চ এল, মানুষ উঠছে। হঠাৎ চিৎকার শুনতে পেলাম। মায়ের কোল থেকে বাচ্চা ছিটকে গিয়ে পানিতে পড়ে গেলো। লঞ্চ ছেড়ে দিয়েছে। মা চিৎকার করে উঠলো। অমনি দুটো লোক পানিতে ঝাপ দিয়ে পড়ল। বাচ্চাটাকে সঙ্গে সঙ্গে উঠালো। চোখ ফেরাতে না ফেরাতেই দেখলাম আর একজন মহিলা পড়ে গেলো পানিতে। অবশ্য তাকেও উঠানো হয়েছে। কিন্তু এই যে হয়রানি এটা থেকে রক্ষা দেবে কে? সামান্য কিছু নিয়ম শৃঙ্খলার অভাবে হাজারো মানুষের প্রাণ ভেসে যাচ্ছে যাওয়ার একমাত্র পন্থা এই আরিচা ঘাঁট। যাইহোক আরিচা ঘাটে দেখা হয়েছিল আমার এক চাচাতো ভাইয়ের সাথে। ধরিয়ে দিলাম ওর হাতে আর একটা ব্যাগ। ও আমাদের অনেক সাহায্য করেছিল। এল পিছন থেকে আর ও একটি ধাক্কা। আমরা মোট চার জন ছিলাম কিন্তু ধাক্কা খেয়ে চারজন চারদিকে ছিটকে পড়লাম। আমি ভাইয়ার হাত ধরেছিলাম। এখন আর কাউকে দেখিনা। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছিলাম। আমি চিৎকার দিলাম। ভয়ে কেঁদেও ফেললাম।
হঠাৎ একটা ছেলে আমার হাত চেপে ধরে বলল, “ভয় নেই তোমার, আল্লাহ ভরসা”। বুকে একটু সাহস এল। খেলাম আর একটা ধাক্কা। চলে গেলাম লঞ্চের মাথায়। যাই হোক কথায় বলে না? আমি লঞ্চের মাথায় উঠলাম কি নদীতে পড়ে যাচ্ছিলাম। আর অমনি সেই ছেলেটি আমার হাত চেপে ধরলো। ছেলেটি হাত না ধরলে আমি নির্ঘাত লঞ্চের নিচে চলে যেতাম। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাকে টেনে উপরে উঠালো। আমি নতুন জীবন ফিরে পেলাম। সত্যি বলতে কি যখন পড়ে যাচ্ছিলাম বা মানুষের চাপের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম তখন ভাইয়া মামার কার ও কথা মনে ছিলনা। শুধু নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য যুদ্ধ শুরু করলাম। যাইহোক যখন লঞ্চে উঠে এক পাশে ছেলেটা আমাকে দাঁড় করিয়ে দিলো ঠিক তখনই আমার ভাইয়ার কথা মামার কথা মনে পড়ে গেলো। এখন চিন্তা করছি ভাইয়া কোথায়, মামা কোথায়? কাঁদতে লাগলাম। ছেলেটি আমাকে সান্তনা দিতে লাগল। জিজ্ঞাসা করল, “তোমার সাথে আর কে আছে? ” আমি বললাম,“আমার ভাইয়া আর মামা। ছেলেটি বলল,তারা হয়ত ভালভাবেই আছে। আমি কাঁদছি আর বলছি তারা ভাল থাকবে কিভাবে? তারা তো চাপেই মরে যাবে। আমি কাঁপছি। ছেলেটির সাথে ছিল আরো দুজন। জানিনা তারা সর্ম্পকে আত্নীয় কিনা। ওদের মধ্যে একজন আমাকে পানি দিল। বলল “চিন্তা করবেন না,পানি পান করুন। ব্যবস্থা একটা হবেই। ছেলেটা বলল তুমি ভয় পাচ্ছ কেন? আমি বললাম, “আমি তো সাঁতার জানি না ”।
ছেলেটা বলল, “আমরা ও জানিনা। তুমি পড়ে গেলে কি আমরা বসে থাকতাম। আবার বলল আমরা তো আছি ভয় কিসের? তোমার ভাইয়ার সাথে দেখা না হলে, আমরা তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসব, তোমার বাড়ি কোথায়?” আমি বললাম “মাগুরাচসে”
ছেলেটি বলল, “সমস্যা নেই আমি বাড়ি ঐদিকেই। তারপরেও সে আর একটি স্থানের নাম নাম বলছিল। হয়ত তার থানার নাম অথবা গ্রামের নাম। কিন্তু ভাগ্য খারাপ আমার তা মনে নেই। কিছুক্ষণ পরে মামাকে দূর থেকে দেখলাম। ঐ একই লঞ্চে মামা। মামা আমাকে খুঁজছে। আমি দেখতে পাচ্ছি কিন্তু ডাকতে পারছি না। ছেলেটা আমাকে বলল, “তোমার ব্যাগ দুটো আমরা দেখছি, “তুমি তোমার মামাকে খুঁজে নিয়ে আস”। আমি ভীড়ের মধ্যে ঠেলে আস্তে আস্তে গেলাম। মামা আমাকে দেখলো আর বলল,“মা ভয় নেই তোর। তুই ওখানেই থাক, আমি রিপনকে ফোন দিচ্ছি কিন্তু পাচ্ছি না।”
রিপন আমার ভাইয়ার নাম। আমি তখন আরো ভয় পেয়ে গেলাম। ছেলেটার কাছে ফিরে এলাম। আমাকে জিঞ্জাসা করলো “পেয়েছেন”? আমি বললাম, “পেয়েছি।”
লঞ্চ ঘাঁটে ভিড়ল। ভাবলাম নামতেও মনে হয় অনেক কষ্ট হবে। কিন্তু তা আর হল না। ছেলেটার সাথে ভাল ভাবেই নামলাম। মামার সাথে ছেলেটার পরিচয় করিয়ে দিলাম। পরিচয় আর কি? বললাম উনার উছিলায় আমি মৃত্যুর হাত হতে রক্ষা পেয়েছি। ভীড়ের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমাদের গাড়ির কাছে পৌছে গেলাম। কিন্তু আমি কাদঁছি ভাইয়ার জন্য। মামা আমাকে সান্তনা দিল। ছেলেটা মামার কাছ থেকে বিদায় নিল। আমাকে শুধু বলল আসি। আমি মাথা নাড়ালাম। কিছুই বলতে পারলাম না। গাড়িতে উঠলাম। আশেপাশের সিটের সবাই ভাইয়াকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু পাচ্ছে না। অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পর ভাইয়া আসল। গাড়ি ছেড়ে দিল। চাচাতো ভাইটাকে ও পেলাম। কিন্তু আমার মনের মধ্যে একটাই ভাবনা হচ্ছিল। ছেলেটাকে ভাল করে একটা ধন্যবাদ ও দিতে পারলাম না। নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছে। নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। হয়ত বা সে এ ঘটনা ভুলে যেতে পারে কিন্তু আমি ভুলতে পারবনা। তার সাথে হয়ত কখনো দেখা হবেনা। কিন্তু তার ব্যাবহার, তার উপকার মনে থাকবে আমার আজীবন।
এই যে, কিছু নিয়ম-শৃঙ্খলার অভাবে মানুষের জীবন চলে যাওয়া অথবা মানুষের এই যে হয়রানি এ থেকে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় আছে কি? সরকার এত কিছুর সু-ব্যাবস্থার পদক্ষেপ নিয়েছে কিন্তু সাধারন সু-ব্যাবস্থার অভাবে বড় কিছু ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার দিকে একটু দৃষ্টি দিলে হয়ত সাধারন মানুষ সস্তি পাবে। যেমন নদীপথের যানবাহনের সু-ব্যাবস্থা বিশেষ করে র্টামিনাল গুলোকে আরও প্রসার সুন্দর নিয়মের দ্বারা বেঁধে দিলে এসব হয়রানীর হাত থেকে সাধারন মানুষ বেঁচে যাবে।
অগ্রাধিকার
--------------------------------------------
ভয়াবহ ঘুর্নিঝড় সিডর
Tuesday, October 21, 2008
মোর বাসনা
বন্ধু পদ্মা মেঘনা যমুনা
তুমি আমি কেউ জানিনা
জানি শুধু একটাই
সে আমাদের সাধনা।
জীবন দিয়ে বাসবভালো
বাঙলা মোদের হ্রদয়ের আলো
সেই আলোতে চলতে চাই
এইতো মোর কামনা।
বাচতে চাই তোমার সুখে
মরতে চাই তোমার বুকে
আকুল করা তোমার গানে
সুর দেয়া মোর বাসনা।
Saturday, October 18, 2008
নির্যাতিত অবলা
অনেক দিনের একটা ইচ্ছা ছিল নার্সিং র্কোস শেখার। ইচ্ছা পূরন ও হয়েছে। আমি ছিলাম নারী জীবন প্রজেক্টের একজন নিয়মিত ছাত্রী এবং বাংলা ব্লগের একজন নিয়মিত লেখিকা। সব ছেড়ে চলে এলাম নার্সিং র্কোস শিখতে কুমিল্লার ব্রাম্মনবাড়িয়ায়, একটা অপরিচিত যায়গা। প্রথম প্রথম সমস্যা হচ্ছিল। এখন একটু দ্বিধাবোধ কেটে গেছে। তো যাই হোক। আমি যেখানে থাকি এটা একটা হাসপাতাল। নতুন হাসপাতাল বলে রোগীর সংখ্যা কম। দিনে ১০-১২টা রুগী আসে। আলাদা কোন র্নাস নেই। আমরা এখানে শিখি এবং পাশাপাশি র্নাসিং এর দায়িত্ব পালন করি। বিভিন্ন ধরনের রুগী আসে। তাদের সেবা করি। ভালই লাগে।
কিছু দিন আগে সকালে একটা রুগী এসেছে। দৌড়ে গেলাম রুগীটাকে দেখতে। প্রয়োজন মত সেবা দেয়াও শুরু করলাম। রোগীটি ছিল মহিলা। প্রথমবস্থায় বুঝতে পারিনি যে রোগীটির কি হয়েছে। কিন্তু পরে জানতে পারলাম মহিলাটি স্বামী ও শ্বাশুড়ীর নির্যাতনের স্বীকার। তাকে এত পরিমানে মারধর করেছে যার ফলে তার জীবন নিয়ে টানাটানি। মহিলাটিকে যথেষ্ট পরিমানে চেষ্টা করলাম সুস্থ করে তুলতে। কিন্তু পারলাম না ।আমাদের ডাক্তার তাকে শহরের বড় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু পাষন্ড স্বামী তা মেনে নিলো না। বলল, “আপনারা যা পারেন তাই করেন। না পারলে বলেন আমি বাড়ি নিয়ে যাই।” ডাক্তার বলল, “আপনার স্ত্রীর অবস্থা খুব খারাপ। এই মুহুর্তে বাড়ি নিয়ে গেলে কিছু একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।” লোকটি বলল,”ঘটুক সমস্যা নাই”। স্যার কিছু না বলে আরেকটা রুগী দেখতে চলে গেল। আমি ও আমার সাথে যারা আছে আমরা রুগীটির কাছে থাকলাম। আমি রোগীটিকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার এঅবস্থা কিভাবে হয়েছে। রোগীটি কথা বলতে পারছে না, শুধু চোখের পানি ফেলছে আর বলছে আমাকে খুব মেরেছে। তার মুখ থেকে কোন কথা বেড়োচ্ছে না । অবলা নির্যাতিত নারীদের জীবনে কোন স্বাধীনতা নেই। আছে শুধু একটি স্বাধীনতা আর তা হল চোখের জল ফেলা। আর কিছু বলতে হল না তাকে আমি বুঝতে পারলাম ইনি একজন স্বামীর নির্যাতনের স্বীকার। সান্তনা দেয়ার ভাষা ছিল না। তবু ও যেহেতু সেবিকার পোষাক পড়েছি সেহেতু কিছু না কিছু সান্তনা দিতে তো হবেই তাই সান্তনা দিলাম। জরুরি বিভাগে রোগীটির স্যালাইন চলছে। রুম থেকে হাসপাতালের বারান্দায় এসে দেখি মহিলার সেই পাষন্ড স্বামী দাঁড়িয়ে আছে। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনার স্ত্রীর সমস্যাটা কি? লোকটি বলল, “কি আর সমস্যা, ওরে পেত্নিতে পাইছে, অয় সারা জীবন আমারে জালাইছে। খালি খালি কোন কারণ ছাড়াই অজ্ঞান হইয়া যায়।” তখন আমার খুব রাগ হচ্ছিল। আমি তখন নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। বলে ফেললাম এটা কোন কথা? আপনি এখনো পেত্নিতে বিশ্বাস করেন। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম , “এধরনের বাজে কথা রোগীর সামনে বলা ঠিক না। আপনি তার স্বামী, আপনি যদি তাকে সান্তনা না দেন তবে কে দেবে?” আপনি সবসময় তার পাশে থাকবেন এবং স্যার যেটা বলল সেটা করেন, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। এই বলে আমি চলে এলাম রিসিপসনের রুমে। ঐ যে আগেই বলেছি এটা নতুন হাসপাতাল তাই রিসিপসনের জন্য আলাদা কোন লোক নেই। অবশ্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। যাই হোক আমি রিসিপসনে গিয়ে বসলাম। ওখানে আরো ও মেয়েরা ছিল। গিয়ে দেখি মধ্য বয়স্ক একজন পুরুষ ও মহিলা এবং ছোট একটা বাচ্চা ওখানে বসে আছে। তারপর জানতে পারলাম যে তারা অসুস্থ মহিলার বাবা এবং মা। তারা উভয়েই কাদঁছে। আমি ও আমার রুমমেট তাকে সান্তনা দিলাম এবং বললাম, আপনার মেয়েকে কি সবসময় এরকম অত্যাচার করে? তিনি বললেন “হ সব সময়ই করে, বিয়ার পরেততেই এমন করে।” তখন আমার রুমমেট জোরে চেঁচিয়ে বলল, “আপনারা এর পদক্ষেপ নেন না কেন?” তারা বলল, “শুধু মাত্র এই নাতিটার মুখের দিকে তাকাইয়া সহ্য কইরা আছি।” কাথাটা শুনে একবার ইচ্ছে হল আরও কিছু বলি কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও উপায় ছিল না। এর মধ্যেই পাষন্ড সেই লোকটি এসে হয়ত বা আমাদের সব কথা শুনে ফেলেছিল। তাই তার শ্বাশুড়ীকে ধমক দিয়ে বলল, “এই বেটি এহেনে কি?” মেয়ে জামাইয়ের কথায় মহিলাটি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি ওখান থেকে ওঠে চলে গেলো। লোকটি আরও অনেক কটু কথা বলল তার শ্বশুর এবং শ্বাশুড়ীকে। আমাদের বলার কিছু ছিল না। শুধু পাষন্ড লোকের পাষন্ডতম ব্যবহারগুলো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখলাম। ঐ এলাকার কিছু মেয়ে আছে আমাদের সাথে নার্সিং শেখে। ওরা বলল লোকটি নাকি খুব খারাপ। বড় ছোট মানে না প্রচন্ড বেয়াদপ।
৩০-মিনিট সময় যেতে না যেতেই দেখলাম মহিলাটিকে রিক্সায় তুলছে। দেখে খুশি হলাম ভাবলাম সদর হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভাগ্য যখন খারাপ হয় তখন ভাগ্যকে ভাল করার কোন রাস্তা থাকে না। কিছুক্ষণ পর জানলাম ওনাকে সদর হাসপাতালে না নিয়ে বাড়িতে নিয়ে গেছে। বুঝতে পারলাম মহিলাটির ভাগ্যে শুধু নির্যাতন জুটলো কিন্তু সু-চিকিৎসা জুটলো না। একেই কি বলে নারীর অধিকার? এ কেমন অধিকার যার ফলাফল শুধু নির্যাতন অন্যায়, অত্যাচার, অবজ্ঞা আর অবহেলা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কথা আমার মনে পড়ে গেল-
“অবহেলিত অসহায় নারীদের
বিচারের বানি নিরবে নিভৃতে কাঁদে”
Wednesday, October 15, 2008
ঈদ
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের জীবনে ঈদ আসে। ধনী-গরীব সবার মধ্যে ঈদের আনন্দ জেগে ওঠে। ঈদের কথা মনে পরতেই মনের মধ্যে আনন্দের জোয়ার এসে যায়। ছেলেবেলা থেকেই আমরা জানি ঈদ সবার জন্য। ঈদ এলে সবার নতুন-নতুন জামা- কাপড় বানানো, মজার মজার খাবার তৈরি করা, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। কত আনন্দ, কত মজা, কত উল্লাস, কত খুশি। তার কোন শেষ নেই। অথচ বর্তমানে এরই মধ্যে কত ব্যতিক্রম! বর্তমানে ঈদ শুধু ধনীদের জন্য। ধনীরাই একমাত্র ঈদের আনন্দটাকে উপভোগ করতে পারে। গরীবদের জন্য শুধুমাত্র নামে ঈদ। ঈদের আনন্দ উপভোগ করার ক্ষমতা তাদের নেই। বর্তমানে আমাদের সমাজে এমন কিছু পরিবারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, যেটা শুধুমাত্র চোখে পরার মত, কিন্তু মুখে বলার মত সাহস, মনমানসিকতা, ইচ্ছা কোনটাই কারও নেই। যেমন আমাদের সমাজে এমন কিছু উচ্চবিত্ত পরিবার আছে যা কেবলমাত্র নিজেদের বিলাসিতার জন্য লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ করে। অথচ তার হাতের কাছে, তারই পাশে এমন এক পরিবার আছে, যারা লক্ষ টাকা তো দুরের কথা একশ টাকা খরচ করতে পারেনা । এমনও অনেক পরিবার আছে যারা ঈদ উপলক্ষে নিজেদের বিলাসিতার জন্য তো করেই, এমনকি ঘরের আসবাবপত্রও পরিবর্তন করে। ঘর সাজাতে দামি দামি অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের ফুলের টপ, ফুলদানি ইত্যাদি ইত্যাদি জিনিসপত্র কিনে থাকে। কিন্তু তারই পাশে বসবাসরত এমন পরিবার আছে যারা পঞ্চাশ টাকা দিয়ে নিজেদের সন্তানের জন্য একটা জামা কিনার ক্ষমতা তাদের নেই। কেন এই তফাৎ আমাদের সমাজে? অথচ এই যে তফাৎ , এটাকে আমরা কেবল ফুটিয়ে তুলতে পারি সবার সামনে। কিন্তু তফাৎটাকে ভেঙে ফেলতে পারিনা। বর্তমানে দেখা যায় গরীবের এই কষ্টটাকে উপহাস করা হচ্ছে। যেমন ঈদ উপলক্ষে টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান দিচ্ছে গরীবদের ঈদ নিয়ে। তারা কিভাবে ঈদ কাটালো সেটা ফুটিয়ে তুলছে ক্যামেরার মাধ্যমে সবার সামনে । আবার ক্যামেরার সামনেই গরীবদেরকে সহানুভুতি দেখাচ্ছে। যে উপস্থাপক বা উপস্থাপিকা উপস্থাপনা করছে, সে নিজে গরীব বাচ্চাটাকে দেখিয়ে আফসোস করছে। অথচ তার বিবেকে এতটুকু প্রশ্ন জাগেনি যে, তার পরনে হাজার টাকার দামে পোষাক। আর যাকে নিয়ে আফসোস করা হচ্ছে সে হয়ত বা খালি গায়ে, না হয়, সে ছেড়াঁ গেঞ্জি পরা। কেন? এই তফাৎ কেন? হাজার টাকার দামি পোষাক না পরে ওখান থেকে কিছু তাদের সাহায্য করি। আমরা ভেবেছি ক্যামেরার সামনে গরীবদের নিয়ে প্রতিবেদন দেখিয়ে তাদের প্রতি সহানুভুতি করছি। কিন্তু না, এতে সহানুভুতিটা প্রমান হয়না। প্রমান হয় বাংলাদেশের ধনীরা সার্থপর। তারা প্রমান করতে চায় তাদের মুখের মহানুভবতা। এটাকে কি মহানুভবতা বলে? না এটা কে উপহাস বলে। উপস্থাপক উপস্থাপিকারা উপস্থাপনা করে যাতে গরীবের এই দুঃখটা ধনীদের চোখে পড়ে। কিন্তু তারা জানেনা সম্পদের লোভে ধনীদের চোখে পর্দা পড়ে গেছে। তারা মুখ দিয়েই শুধু আফসোস করবে। তারা শুধুমাত্র মুখের ব্যবহার করবে, কিন্তু অন্তরের ব্যবহার করবে না। আমি সুদূরে যাবনা, আমি আমার বাংলাদেশের কথাই বলি। এই সমাজে কেউ কোটিপতি আবার কেউ শূন্যপতি, যাকে বলা হয় এক কথায় নিঃস্ব। কেন এত বড় উচ্চ তফাৎ? একজন কোটিপতির যদি মাসে দশ লক্ষ টাকা আয় হয়। এবং সে যদি ঐ টাকা থেকে তার একজন গরীব কর্মচারীকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেয়। তবে পরের দিন সেই গরীব কর্মচারী আর গরীব থাকবে না। আর শুধুমাত্র এই ব্যবস্থা সম্ভব হবে যাকাত প্রথা চালু করার মাধ্যমে।